আল্ট্রাসনোর অপব্যবহারে কন্যাশিশু জন্মের হার কমছে - BD Health Barta

আল্ট্রাসনোর অপব্যবহারে কন্যাশিশু জন্মের হার কমছে

চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে তাল মিলিয়ে বিকাশ ঘটছে মানব সভ্যতার। নতুন নতুন রোগ-ব্যাধি নিরাময়ে প্রযুক্তি বিদ্যার উৎকর্ষ সাধনে বিজ্ঞানীদের প্রাণান্তকর চেষ্টায় আবিষ্কৃত হচ্ছে উন্নত ঔষধ।
চিকিৎসা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে মানুষ ফিরে পাচ্ছে নতুন জীবন। কিন্তু এই প্রযুক্তির ব্যবহারই যদি হয় মানুষের প্রাণনাশে, তবে এর চেয়ে নিষ্ঠুরতা আর কী হতে পারে? এটা মানব সভ্যতার জন্য কোন সুসংবাদ বয়ে আনে না।
সম্প্রতি ভারত এবং চীনে এ ধরনের এক নিষ্ঠুর ও ভয়াবহ কর্মকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। জনসংখ্যায় পৃথিবীর শীর্ষ এ দেশ দুটিতে পুরুষের তুলনায় নারীর হার কমছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
এর কারণ আল্ট্রাসনোগ্রাফির অপব্যবহারের মাধ্যমে শিশুর লিঙ্গ চিহ্নিত করে ‘গর্ভপাত’ ঘটানো। জাতিসংঘের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এশিয়ার ১০ কোটি ১৭ লাখ কন্যাশিশুর গর্ভপাতের অধিকাংশই হচ্ছে ভারত এবং চীনে।
গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে আগেই জেনে যাচ্ছে, গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে? তারপর ছেলে সন্তান হলে দম্পতি সানন্দেই সংসার ধর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। আর কন্যা সন্তান হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা গর্ভপাত ঘটাচ্ছেন।
জাতিসংঘের এক জরিপে দেখা যায়, মুম্বাইয়ে কন্যাশিশু গর্ভপাতের এ হার খুব বেশি। সেখানে প্রতি এক হাজার ছেলের বিপরীতে মেয়ের অনুপাত ৮৯২ জন। যদিও তা সমগ্র ভারতের চিত্রের চেয়ে খারাপ নয়।
ভারতে প্রতি এক হাজার ছেলে সন্তানের বিপরীতে কন্যাশিশু জন্মের হার ৯১৪ জন। আর ভিয়েতনামে ছয় বছরের নিচে প্রতি হাজার ছেলে শিশুর বিপরীতে কন্যা শিশুর সংখ্যা ৮৯৯ জন।
অপরদিকে এক সন্তান নীতির দেশ চীনে আগে থেকেই ছেলে-মেয়ের অনুপাতে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য ছিল। সেখানে এক হাজার ছেলে শিশুর বিপরীতে জন্য জন্ম নিচ্ছে মাত্র ৮৪৭ জন কন্যাশিশু।
মুম্বাইয়ের গর্ভপাত প্রবণতার জাতিসংঘ প্রতিবেদনটি তখনই প্রকাশ করা হলো, যখন রাজ্য সরকার, মুম্বাই হাইকোর্ট এবং সেখানকার মানবাধিকার কর্মীরা এ নিয়ে চরমভাবে উদ্বিগ্ন।
ইতিমধ্যে পোর্টেবল আল্ট্রাসনো মেশিন ব্যবহারের দায়ে মুম্বাইয়ের মেডিকেল কলেজের একজন রেডিওলজিস্টের বিরুদ্ধে সেখানকার হাইকোর্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। একই সাথে রাজ্য সরকার যাদের তৃতীয় সন্তান মেয়ে তাদের সহায়তা দেয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেছে।
ইউএনএফপি-এর মতে, একশ কন্যাশিশুর বিপরীতে ছেলেশিশুর হার হতে হবে ১০২ থেকে ১০৬ এর মধ্যে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন অনকেটাই ঘোলাটে। কারণ তুলনামূলক অনেক কম কন্যাশিশু জন্ম নিচ্ছে।
সংস্থাটির এক কর্মীর মতে, প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণেই এ রকম নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। দম্পতিরা আল্ট্রসাউন্ড মেশিনের মাধ্যমে গর্ভজাত সন্তানকে সনাক্ত করে এবং শিশুকন্যা হলে তার গর্ভপাত ঘটায়।
জাতিসংঘের জরিপের পর কন্যাশিশুর প্রয়োজনীয়তা ও আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংগঠন কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ভারতে স্বাস্থ্য অধিকার কর্মী লক্ষ্মী চন্দ্র।
অবশ্য আল্ট্রাসাউন্ড মেশিনকে দায়ী করে জাতিসংঘের এ জরিপে উষ্মা প্রকাশ করেছে ভারতের চিকিৎসকেরা। তাদের দাবি, কয়েক যুগ ধরে আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতির ব্যবহার চলে আসছে। এটা শুধু লিঙ্গ সনাক্তকরণ কাজেই ব্যবহার হয় না। কন্যাশিশুর ব্যাপারে দম্পতিদের মানসিকতা জরুরি।
এদিকে, ভারতে কন্যাশিশু রক্ষার দাবিতে সরকারের প্রতি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের চাপ বাড়ছে। সেই সাথে জোরদার হচ্ছে সামাজিক আন্দোলন। আর উপায় খোঁজা হচ্ছে প্রযুক্তির অপব্যবহার কিভাবে রোধ করা যায়।

Popular Posts

Sort Posts by Month

Search This Blog

Total Pageviews