বলিউড যেভাবে স্বাক্ষরতা দান করে - BD Health Barta

বলিউড যেভাবে স্বাক্ষরতা দান করে


ভারতে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা কম নয় তবু অনেকেই আছে যারা পড়তে পারেনা ভালো করে। ২০১১ সালের আদমশুমারি থেকে দেখা গেছে ৭ বছর বা তার কিছু বয়স্কদের ৭৪ শতাংশ অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। তাহলে কতজন অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ব্যাক্তি সাধারণ একটি বাক্য পড়তে পারে?
আহমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট এর এক সামাজীক উদ্যোক্তা ব্রিজ কোঠারি সম্প্রতি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে দেয়া বর্ণজ্ঞানের একটি উদ্যোগ নিয়ে তথ্য প্রদান করেছেন। তার দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ভারতে সাক্ষরতাসম্পন্ন মানুষের সঠিক সংখ্যা খুজতে গিয়ে খুবই দুঃখজনক সংখ্যা পাওয়া গেছে, ২০১১ সালের একটি রিপোর্টে পাওয়া গেছে ৫১.৮ শতাংশ ৫ম শ্রেণী পড়ুয়াই ২য় শ্রেণী সমমানের পাঠ পড়তে অক্ষম। আর ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট এর একটি জরিপ থেকে দেখা গেছে ভারতের ৫০ শতাংশ সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ব্যাক্তি পত্রিকার শিরোনাম পড়তে অক্ষম।
অথচ, সরকারীভাবে জানা গেছে ভারতে ৭০ কোটি সাক্ষরিত ও ২০ কোটি অসাক্ষরিত লোক রয়েছে। কোঠারি বলেন, ১৯৯৬ সালে নিউ ইয়র্কে তিনি কয়েকজন বন্ধুদের সাথে বসে একটি স্প্যানিশ ছবি দেখছিলেন যাতে ছিল ইংরেজীতে দেয়া সাবটাইটেল। তখন হঠাৎ করেই তার মাথায় একটি বুদ্ধি আসে। যেহেতু তিনি স্প্যানিশ শেখার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন সেহেতু ভাবলেন, ছবিটির সাবটাইটেল যদি একই ভাষা অর্থাৎ স্প্যানিশেই থাকত তাহলে তার জন্য সেই ভাষা শেখা সুবিধা হত। আর তখনই তিনি চিন্তা করলেন, হয়তবা ভারতে সাক্ষরতা বৃদ্ধি সম্ভব যদি বলিউডের হিন্দি ছবির গানগুলো হিন্দি সাবটাইটেলসহ টিভিতে দেয়া থাকে।
আর এই পরিকল্পনাকে নাম দেয়া হয়েছে সেইম ল্যাঙ্গুয়েজ সাবটাইটেল বা এসএলএস পদ্ধতি। এতে করে হিন্দি ছবির গানগুলোর সাবটাইটেল হিন্দিতে, তামিল ছবির গানগুলোর সাবটাইটেল তামিল ভাষায়। বলিউডের এই ব্যবহারের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে এই পদ্ধতিটি বেশি ফলপ্রসূ হবে কেননা-
-ভারতীয়দের সবচেয়ে বশি আবেগ থাকে হিন্দি ছবির গানের প্রতি।
-বলিউড বছরে ১ হাজারের মত ছবি তৈরী করে যাতে থাকে ৫ হাজাএর মত গান আর তাতে থাকে বিভিন্ন ভাষার মিশ্রণ।
-৭০ কোটি লোক টেলিভিশন দেখে যেখানে প্রাধান্য থাকে বলিউডের বিষয়বস্তু।
এসএলএস পদ্ধতি যেভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে কোঠারি বলেন, টেলিভিশন দর্শকরা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন এই পদ্ধতিতে সহজেই। টিভিতে তারা একই ভাষার সাবটাইটেল দেয়া গান দেখেন। কারণ তারা গানের কত্থাগুলো মুখস্ত করতে চান। ফলে গান শোনার পাশাপাশি সাবটাইটেলে তা চোখের সামনে দেখেন আর মনের অজান্তেই তা পড়েন। এতে করে তাদের পড়ার দক্ষতা গড়ে ওঠে।
স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংগৃহীত একটি তথ্য থেকে দেখা গেছে, ৩-৫ বছর বয়স্কদের ওপর সাপ্তাহিক ৩০ মিনিটের এসএলএস পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে তাদের পড়ার ক্ষমতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি। তবে পদ্ধতিটির সীমাবদ্ধতা নিয়েও ভাবা হয়েছে। কেননা এটি শুধুই বলিউডের গানের কথা ভিত্তিক। যখন গান শেষ হয়ে যাবে তখন আর পড়ার আগ্রহ থাকবেনা। জরিপে দেখা গেছে, ভারতীয়রা তাদের পড়ার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সংবাদপত্রের দিকেই বেশি ঝোঁকে। তবে সেখানে তারা তেমন উপভোগ করতে পারেনা। এখন পর্যন্ত এসএলএস পদ্ধতিতে সাক্ষরতায় লাভবান হয়েছেন পুরুষের চেয়ে নারী। কেননা বলিউডের নারী দর্শক বেশি।
এসএলএস পদ্ধতি ১৯৯৯ সালে প্রথম গুজরাটে রুপায়ন করা হয়। এর সফলতায় ২০০২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পদ্ধতিটি কার্যকর রয়েছে জাতীয় মাধ্যম থেকে শুরু করে নানা মধ্যমে। আর তা সমগ্র দেশ জুড়ে হয়েছে সমাদ্রিত।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি

Popular Posts

Sort Posts by Month

Search This Blog

Total Pageviews